সালাতুল হাজত কি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং উক্ত সালাত পড়ার নিয়ম কি?

স্বালাতুলহা-জাহ্‌ বা প্রয়োজন পূরণের নামায অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ কিছু চাইতে ২ রাকআত এই নফল নামায বিধেয়। মহানবী (সাঃ) যখন কোন কঠিন বিপদে বা সমস্যায় পড়তেন, তখন নামায পড়তেন। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ১৩১৯, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত ১৩২৫নং) আর মহান আল্লাহ বলেন,

(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ)

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে (আল্লাহর কাছে) সাহায্য প্রার্থনা কর। (কুরআন মাজীদ ২/৪৫, ১৫৩)

এক অন্ধ ব্যক্তি নবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বলল, ‘আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে অন্ধত্ব থেকে মুক্ত করেন।’ তিনি বললেন, “যদি তুমি চাও তোমার জন্য দুআ করব। নচেৎ যদি চাও ধৈর্য ধর এবং সেটাই তোমার জন্য শ্রেয়।”  লোকটি বলল, ‘বরং আপনি দুআ করুন।’

সুতরাং তিনি তাকে ওযু করতে বললেন এবং ভালোরুপে ওযু করে দু’ রাকআত নামায পড়ে এই দুআ করতে আদেশ দিলেন:-

‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। তোমার নবী, দয়ার নবীর সাথে তোমার অভিমুখ হ্‌চ্ছি। হে মুহাম্মদ! আমি আপনার সাথে আমার প্রতিপালকের প্রতি আমার এই প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারে অভিমুখী হয়েছি। হে আল্লাহ! আমার ব্যাপারে তুমি এর সুপারিশ গ্রহণ কর এবং এর ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ গ্রহণ কর।’

বর্ণনাকারী বলেন যে, অতঃপর ঐ ব্যক্তি ঐরুপ করলে সে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। (তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, সহিহ তারগিব ৬৭৮নং)

প্রকাশ থাকে যে, অভাব মোচনের নামায ও লম্বা দুআর হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল। (তিরমিযী, সুনান ৪৭৯, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ১৩২৭নং, টীকা দ্র:)

ছালাতুল হাজত (صلاة الحاجة)

বিশেষ কোন বৈধ চাহিদা পূরণের জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে যে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ‘ছালাতুল হাজত’ বলা হয়।[1] সঙ্গত কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য বান্দা স্বীয় প্রভুর নিকটে ছবর ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবে’ (বাক্বারাহ ২/১৫৩)। এজন্য শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে আশু প্রয়োজনীয় বিষয়টির কথা নিয়তের মধ্যে এনে নিম্নোক্ত সারগর্ভ দো‘আটি পাঠ করবে। اَللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ- (আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খেরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র)। ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দিন ও আখেরাতে মঙ্গল দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা করুন’। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অধিকাংশ সময় এ দো‘আটিই পড়তেন’।[2]

দো‘আটি সিজদায় পড়লে বলবে, اَللَّهُمَّ آتِنَا... আল্লা-হুম্মা আ-তিনা...। কেননা রুকূ-সিজদায় কুরআনী দো‘আ পড়া চলে না। [3]

হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন ছালাতে রত হ’তেন’।[4]

উক্ত বিষয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী সারা’র ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে। যখন তিনি অপহৃত হয়ে মিসরের লম্পট সম্রাটের নিকটে নীত হলেন ও অত্যাচারী সম্রাট তার দিকে এগিয়ে গেল, তখন তিনি ওযূ করে ছালাতে রত হয়ে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করে বলেছিলেন,اَللَّهُمَّ لاَ تُسَلِّطْ عَلَىَّ هَذَا الْكَافِرَ ‘হে আল্লাহ! এই কাফেরকে তুমি আমার উপর বিজয়ী করোনা’। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং উক্ত লম্পটের হাত-পা অবশ হয়ে পড়েছিল। তিন-তিনবার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সে বিবি সারা-কে সসম্মানে মুক্তি দেয় এবং বহুমূল্যবান উপঢৌকনাদি সহ তার খিদমতের জন্য হাজেরাকে তার সাথে ইবরাহীমের নিকট পাঠিয়ে দেয়।[5]

ফুটনোটঃ[1] . ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৫, ছালাত অধ্যায়-২ অনুচ্ছেদ-১৮৯।

[2] . বুখারী হা/৪৫২২, ৬৩৮৯; ঐ, মিশকাত হা/২৪৮৭, মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩।

[3] . মুসলিম, মিশকাত হা/৮৭৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ-১৩; নায়ল ৩/১০৯।

[4] . আবুদাঊদ হা/১৩১৯ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৩১২; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭০৩; ঐ, মিশকাত হা/১৩১৫।

[5] . বুখারী হা/২২১৭ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়-৩৪, অনুচ্ছেদ-১০০; আহমাদ হা/৯২৩০, সনদ ছহীহ।

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post

Contact Form