নগ্ন বা সেক্সী ফিল্ম ( porn video) দেখার ভয়াবহতা

• নগ্ন ছবি দেখার ফলে মস্তিক্সের সম্মুখভাগ নষ্ট হয়ে যায়।
যৌন উত্তেজনামূলক নোংরা ফিল্ম দেখার অভ্যাস মাদকদ্রব্য সেবনের মতোই এক প্রকার ঘৃণ্য ক্ষতিকর অভ্যাস। এর ফলে মস্তিস্কের সম্মুখভাগ Frontal Loob নষ্ট হয়ে যায়।

গবেষক Gordon S. Bruin বলেন, ‘আমার ২০ বছর নোংরা ফিল্ম দর্শনের অভ্যাসীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে লক্ষ্য করেছি, যৌন-মিলনের ফিল্ম দেখার অভ্যাস মাদকদ্রব্য সেবনে অভ্যাসের মতো একটি প্রকৃত ব্যাধি।

Cambridge University এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, pornography দর্শনের ফলে দরশকের মস্তিস্ক মাদকদ্রব্য সেবনকারীর মস্তিষ্কের মতো হয়ে যায়। ফলে তার দর্শন মাদকদ্রব্য সেবনের নেশায় পরিণত হয়। মাদকদ্রব্য সেবন না করে যেমন অভ্যাসীর স্বস্তি আসে না, শান্তি আসে না, ঠিক তেমনই অবস্থা ঘটে পর্নগ্রাফী দর্শনের অভ্যাসীর।

বড় দুঃখের বিষয় যে, আধুনিক বিশ্বের বিশ্বায়নের যুগে আজ যত্রে-তত্রে নোংরা ছবির ছড়াছড়ি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ২৮০০০ মানুষ নোংরা সাইটে প্রবেশ করছে এবং পশুবট যৌনমিলন দর্শন করছে। আরো দুঃখের বিষয় যে, এদের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ হল মহিলা।

এর ফলে এত বৃহৎ সংখ্যক মানুষের মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে নোংরা ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু যৌন-উত্তেজনা সৃষ্টিকারী দৃশ্য দেখামাত্র সাথে সাথে dopamine, oxytocin o testosterone পদার্থ ক্ষরণ হতে থাকে এবং এমন তুফান সৃষ্টি করে, যা মস্তিষ্ককে ও পড়াশোনার সর্বনাশ ঘটিয়ে ছাড়ে। তাতে ব্রেনের গুরুত্বপূর্ণ কোষ নষ্ট হতেও পারে।

নোংরা যৌনমিলনের ভিডিও দেখার সময় dopamine পদার্থ খুব বেশি আকারে বের হতে থাকে। আর আর ফলে মস্তিষ্কের সম্মুখস্থ অংশ দুর্বল হতে থাকে। আর এই অংশ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বড় গুরুত্বপূর্ণ। বলা বাহুল্য, মস্তিষ্কের এই অংশটি গাড়ির ব্রেকের মতো। ভেবে দেখুন, আপনি যদি কোন ব্রেকহীন বা ব্রেক খারাপ হওয়া গাড়ি চালান, তাহলে যে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে বাধ্য। অনুরূপই অতিরিক্ত পর্ণগ্রাফী দর্শনের ফলে আপনি নিজের ব্যক্তিত্ব হারিয়ে ফেলতে পারেন। যেহেতু উক্ত পদার্থ অধিক ক্ষরণের ফলে আপনি আপনার নিজের আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবেন।

যেমন dopamine পদার্থটি মানুষের মানসিক সুখের জন্য অতীব জরুরী জিনিস। যখনই সুখের কোন বিষয় আসে, যেমন প্রচুর অর্থোপার্জন হয় অথবা কোন বিশাল সফলতা আসে, তখনই উক্ত পদার্থ ক্ষরণ হতে থাকে এবং তারই কারণে আমরা সুখ ও তৃপ্তি অনুভব করতে লাগি। কিন্তু যখনইকন মানুষ পর্ণগ্রাফী দেখতে অভ্যাসী হয়ে পড়ে, তখনই dopamine পদার্থ বেশি বেশি ক্ষরণ হতে থাকে এবং এর ফলে ধীরে ধীরে সেই কোষগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে, যেগুলি উক্ত পদার্থ ক্ষরণ করতে থাকে। আর ক্রমে ক্রমে পদার্থ হ্রাস পেতে থাকে এবং কোষগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে মানুষের সুখানুভূতি লয়প্রাপ্ত হয়। সে কোন বিষয়ে আর তেমন সুখানুভব করে না, যেমন পূর্বে করতো। তখন সে এমন কিছু অনুসন্ধান করে, যা আরো বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ঠিক যেমনটি মাদকাসক্তির ফলে ঘটে থাকে। যা এক সময় এমন এক পরিস্থিতিতে এনে উপনীয় করে, যখন মস্তিষ্কের বিশেষ কোষগুলি বিকল হয়ে যায়। আর এটা অবশ্যই প্রকৃত ধ্বংস।

মাদকাসক্তরা যতটা আসক্তি মাদকদ্রব্যের প্রতি রাখে, তার থেকে বেশি আসক্তি আসে নগ্ন নারীদেহ ও যৌন-মিলন দর্শনের প্রতি। মাদকদ্রব্য মাদকাসক্তদের যতটা ক্ষতি করে, তার থেকে বেশি ক্ষতি করে নগ্ন নারীদেহ ও যৌনমিলন দর্শনের মাধ্যমে উষ্ণ তৃপ্তি গ্রহণকারীদের। কিন্তু নেশার ঘোরে ক্ষতিগ্রস্তরা সে ক্ষতির কথা অনুভবও করতে পারে না। পরিশেষে সর্বনাশই তাদের ভাগ্য হয়।

• সেক্সী ফিল্ম দেখার অভ্যাস করার ফলে অপরাধীর দাম্পত্য জীবন ধ্বংস হয়ে যায়।
ব্রেনের মধ্যে oxytocin পদার্থ মানুষের মাঝে বিশ্বাস রক্ষার দায়িত্ব পালন করে থাকে। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যে বিশ্বস্ততা  থাকে, তাও আসলে উক্ত পদার্থই সৃষ্টি করে থাকে।

অধিকাধিক পর্ণগ্রাফী দৃশ্য দেখার ফলে উক্ত পদার্থ প্রচুর পরিমাণে ক্ষরণ হয়। এর ফলে তার মনে সৃষ্টি হয় কাল্পনিক নারী-নেশা ও যৌনক্ষুধা। সুতরাং উক্ত পদার্থ ক্ষরণের স্বাভাবিক সিস্টেম বিগড়ে যায়, বিগড়ে যায় আরো কিছু হরমোন ক্ষরণের সিস্টেম। এরই ফলশ্রুতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার দাম্পত্য জীবন। অনেক ক্ষেত্রে ভেঙ্গে পড়ে আবেগ ও সম্প্রীতির জীবন। বহু গবেষণা এ কথার তাকীদ করেছে যে, অশ্লীল ফিল্ম দর্শনই বহু দাম্পত্য সমস্যা ও পারিবারিক বিবাদের জন্য দায়ী।

পর্ণগ্রাফী দেখার ফলে যুবক হস্তমৈথুন বা অন্য কোন বিরল মৈথুনে আসক্ত হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে সে কাল্পনিক কোন যৌনময় জগতে বসবাস শুরু করে, যা স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক যৌনজগৎ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। বিবাহ ও স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন তার কাছে যৌনক্ষুধা নিবারণের মাধ্যম বৈ অন্য কিছু মনে হয় না। এর ফলে বাস্তব দাম্পত্য সুখের কথা তার মন থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। অতঃপর বিবাহ করলেও সে তাতে অসফল ও অসুখী হয়। সাধারণতঃ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিশ্বাসঘাতকতার সন্দেহ জন্মে। পরিশেষে কাল্পনিক যৌনাচার অথবা ব্যভিচারের মাধ্যমে বাস্তব যৌনাচারের মাঝে সুখ অনুভব করতে চায়। আর এরই দরুন সে দম্পতির সংসারের শিশমহল ভেঙ্গে চূর্ণ হয়ে যায়।

• সেক্সী ফিল্ম দেখার অভ্যাস করার ফলে অপরাধী ব্যভিচারের মতো বড় পাপ ঘটায়।
এ কথা স্বাভাবিক যে, অশ্লীল দৃশ্য দেখার ফলে দেহমন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে হস্তমৈথুন বা অন্য কোন বিরল যৌনাচারে লিপ্ত হয়। তাতেও তৃপ্তি না পেলে এবং সহমতাবলম্বী সঙ্গী পেলে ব্যভিচার অথবা সমকামের মাধ্যমে মনের আগুন নির্বাপিত করে ও নিজের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে এবং সেটা তার স্বাভাবিক চরিত্রে পরিণত হয়।

• সেক্সী ফিল্ম দেখার অভ্যাস করার ফলে অপরাধী ধর্ষণের মতো বড় পাপ ঘটায়
অনেক দর্শকই বাস্তব সুখ ও তৃপ্তি অনুভব করতে গিয়ে ব্যভিচারী হয়ে যায়। পরন্তু অনেক সময় সহমতাবলম্বী সঙ্গী না পেলে ধর্ষণের মতো আরো বড় অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ হয়।

ডক্টর Victor B. Cline লিখেছেন, অশ্লীল ছবি দর্শকের চরিত্র বিরল প্রকৃতির হয়ে ওঠে। সুতরাং বলাৎকার, ইভটিজিং, শিশু অপহরণ ইত্যাদির মতো অপরাধ তার স্বাভাবিক আচরণ হয়ে যায়।

• সেক্সী ফিল্ম দেখার অভ্যাস করার ফলে অপরাধীর সৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে।
গবেষণায় জানা গেছে যে, অশ্লীল সেক্সী চিত্রাবলী দর্শন অভ্যাসে পরিণত হওয়ার ফলে মানুষের সৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। পড়ুয়াদের পড়াশোনায় বিশাল ক্ষতি হয়। মন বিক্ষিপ্ত ও উদাসীন হয়। মানসিক আরও অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়।

• সেক্সী ফিল্ম দেখার অভ্যাস করার ফলে নাবালক শিশুদের ভবিষ্যৎ বরবাদ হয়ে যায়।
যে সকল শিশুদের বয়স ১৪ বছরের নিম্নে, বিশেষ করে তাদের জীবন এই অশ্লীল চিত্রাবলী দর্শনের ফলে ভীষণভাবে প্রভাবান্বিত হয়। তাদের মস্তিষ্ক বিকৃত হতে থাকে। তারা অপরাধ জগতের দিকে ঢলে পরে। তারা ভাবে ফ্রি সেক্সই বল স্বাভাবিক জীবন। যৌবনের প্রথম পদক্ষেপেই যে সকল চিত্র দর্শন করে বাস্তবে তা চরিতার্থ করতে চায়। ফলে নোংরা জীবনই তাদের আসল জীবন হয়ে দাঁড়ায়।

• সেক্সী ফিল্ম দেখার অভ্যাস করার ফলে অপরাধীর নানা রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে যে, অশ্লীল যৌনমিলনের ছবি দেখার ফলে মানুষের নানা রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন- হরমোন সমস্যা, হৃদরোগ, ব্লাডপ্রেসার, atherosclerosis ইত্যাদি।

• স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের নগ্নদেহ দর্শন সে ক্ষতি করে না।
গবেষণায় জানা গেছে যে, স্বামী-স্ত্রীর নগ্নদেহের বৈধ দর্শন ও যৌন-সংসর্গে উক্ত কোন ক্ষতির আশঙ্কাই নেই। বরং তা উভয়ের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও বড় উপরাকী। স্বামী-স্ত্রীর যৌনাচারের ফলে তাদের উভয়ের মধ্যে immunity system শক্তিশালী হয় এবং ব্রেনের সক্রিয়তা বৃদ্ধ পায়।

স্বামী-স্ত্রীর যৌনাচারে dopamine, endorphins-oxytocin, serotonin এবং অন্যান্য পদার্থ স্বাভাবিক আকারে ক্ষরণের ফলে তাদের উভয়ের মনে অধিক প্রশান্তি ও ভালোবাসা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। পক্ষান্তরে অন্য নারীদেহ নগ্ন দেখলে অথবা ব্যভিচারের মাধ্যমে উপভোগ করলে উক্ত পদার্থগুলি বেশি আকারে ক্ষরণ হতে থাকে। আর তা স্বভাবতই মস্তিষ্কের প্রভূত ক্ষতি সাধন করে, যেমন মাদকদ্রব্য মাদকাসক্তের করে থাকে।
বৈধ ও অবৈধ উভয় যৌনমিলনের মাঝে পার্থক্য করে প্রকৃত ও স্বাভাবিক প্রেমবন্ধনের অবর্তমানতা। তারই ফলে ব্রেন-ফাংশনে নানা ডিস্টার্ব সৃষ্টি হয়।

পূর্বেই বলা হয়েছে মস্তিষ্কের সম্মুখভাগ বা Frontal Loob গাড়ির ব্রেকের মতো। এই ভাগের কাজ হল পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু অবৈধ যৌনমিলন করা বা দেখার ফলে ধীরে ধীরে তার অনেকাংশ নষ্ট হয়ে যায়, ঠিক যেমন গাড়ি অস্বাভাবিক গতিতে চালালে ব্রেক নষ্ট হয়ে যায়। পক্ষান্তরে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালালে তা সহজে নষ্ট হয় না। অনুরূপ স্বাভাবিক ও বৈধ সম্পর্কের যৌনমিলন করা ও দেখার ফলে উক্ত ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। বরং এর ফলে ব্রেনের উক্ত ভাগটি সতেজ, সক্রিয় ও মানব জীবনের বহু সাফল্যের সহযোগী হয়ে ওঠে।

যেহেতু এ হল সুমহান স্রষ্টার সৃষ্টি। তিনিই স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই এক অন্যের পোশাক বানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক”। (সূরা বাক্বারাহঃ ১৮৭)

বিবাহের বিধান দিয়ে তিনিই তাদের মাঝে ভালোবাসা ও স্নেহময় সম্পর্কের বাঁধনে উভয়কে বেঁধে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে আর একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা ওদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধে পারস্পরিক ভালোবাসা ও মায়া-মমতা সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে”। (সূরা রূমঃ ২১)

কত সুন্দর মহান স্রষ্টা! কত সুন্দর তাঁর বিধান!!

লেখকঃ শাইখ আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post

Contact Form