ছোটকাল হতে সালাতে {নামাযে} মুখে উচ্চারনে ‘নাওয়াতু আন….’ পড়ে নিয়্যাত করা শিখেছি, এখন আপনারা বলছেন এটা বিদ’আত, দলিল দিন।
■উত্তরঃ-
আপনার কথা ঠিক, আমাদের সমাজের আলেমগণ প্রত্যেক ওয়াক্তে ফজর, যোহর…, বিতর, ঈদ অন্যান্য সকল সালাতের ফরজ, সুন্নাত, নফল এর জন্য পৃথক পৃথক আরবী নিয়্যাত পড়ার কথা আমাদেরকে শিখিয়েছেন। [বেহেশতী জেওর ২/১৩০-১৩২ মাসআলা]
ঐ কিতাবের অনুবাদে বলা হয়েছে,
-তবে বুযুর্গানে দ্বীন আরবী নিয়্যাত পছন্দ করিয়াছেন।তাই আরবী নিয়্যাত পড়িলে ভালো। [বেহেশতী জেওর ২/১৩০-১৩২ মাসআল]
.
❏ নিয়্যাতঃ
কোন জিনিস সম্পন্ন করার ব্যাপারে মনের দৃঢ় সংকল্প এবং অন্তরের গভীর ইচ্ছা পোষণ করাকে শরীয়তের পরিভাষায় নিয়্যাত বলে। আর ইহার স্থান হলো অন্তর বা কলব। এর সাথে মুখে উচ্চারণ করার কোন সম্পর্ক নেই। [ইগাছাতুল লুহফান ১/১৫৬ পৃঃ]
.
সালাতে নিয়্যাত ফরজ এবং শর্ত বটে, কিন্তু মৌখিক বলার অবকাশ নেই। মুখে উচ্চারণে নিয়্যাত পড়া বিদ’আত, দলিল হলোঃ
রাসূল ﷺ বলেন,
-আমল সমূহ নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল, আর প্রত্যেক ব্যক্তিই তাই পাবে, যা সে নিয়্যাত করবে। [ বোখারী ১/৪১; মুসলীম ৯/৪৬]
উপরোক্ত হাদীস হতে বোঝা গেলো নিয়্যাত করতে হয়, নিয়্যাত পড়তে হয় না।
.
হাফেজ ইবনে কাইয়িম (রহ:) বলেন,
-নবী (সঃ) যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন আল্লাহু আকবার এবং এর পূর্বে কিছুই বলতেন না এবং মুখে কোন নিয়্যাত উচ্চারণ করতেন না। এবং একথাও বলতেন না যে আমি অমুক সালাত, ওমুক রাকাত, মুখ করিয়া অথাব মুক্তাদি হয়ে পড়ছি। এমন একটা শব্দও রাসুল (স:) এর কোন কোন সহীহ, জাল বা জঈফ হাদীসেও বর্ণিত হয় নাই। [যাদুল মা’আদ খন্ড. ১ পৃঃ৫১]
উপরোক্ত হাদীস হতে বোঝা গেলো যে নিয়্যাত রাসুল (স:) কখনও পড়েননি।।
.
বিখ্যাত হানাফী আলেম আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রঃ) বোখারীর শরা হতে লিখেছেন,
-নিয়্যাত হলো অন্তরের কার্যসমূহ। [ ফয়যুল বারী-১/৮ পৃঃ]
.
আল্লামা মোল্লা কারী হানাফী বলেন,
-রাসুল ﷺ ত্রিশ হাজার সালাত পড়েছেন। তথাপি তাঁর থেকে একথা বর্ণিত নেই যে, ‘আমি অমুক অমুক সালাতের নিয়্যাত করছি। এই ভাবে নিয়্যাত না পড়াটাই বরং সুন্নাত, যেমন তার কাজ করা সুন্নাত। [মিশকাত খন্ড ১. পৃঃ ৩৭]
.
আপনি সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে মসজিদে কিংবা ঘরের সালাতের স্থানে যাচ্ছেন এটাই আপনার নিয়্যাত। আবার সালাতে দাড়িয়ে মুখে উচ্চারণে “নাওয়াইতুয়ান…” এই জাতীয় কোন শব্দ বলা ঠিক না, এটা বলা বিদ’আত। আর বিদ’আত করলে কোন ইবাদত কবুল হয় না!