♦সাহাবী :- যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহচর্য লাভ করেছেন বা তাঁকে দেখেছেন বা তাঁর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, অথবা জীবনে একবার তাঁকে দেখেছেন এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে রাসূল(সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবী বলে।
♦তাবিঈ :- যিনি রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন সাহাবীর নিকট হাদিস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততঃপক্ষে তাঁকে দেখেছেন এবং মুসলিম হিসাবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে তাবিঈ বলে।
♦মহাদ্দিস :- যে ব্যক্তি হাদিস চর্চা করেন এবং বহু সংখ্যক হাদীসের সনদ ও মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন তাঁকে মুহাদ্দিস বলে।
♦শাইখ :- হাদীসের শিক্ষাদাতা রাবীকে শায়খ বলে।
♦শাইখাইন :- সাহাবীগণের মধ্যে আবূ বাকর ও উমারকে(রাঃ) একত্রে শাইখাইন বলা হয়।কিন্তু হাদীশাস্ত্রে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমকেও(রহঃ) একত্রে শায়খাইন বলা হয়।
♦হাফিয :- যিনি সনদ ও মতনের বৃতান্তসহ এক লাখ হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হাফিয বলা হয়।
♦হজ্জাত :- অনুরুপভাবে যিনি তিন লক্ষ হাদিস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হজ্জাত বলা হয়।
♦হাকিম :- যিনি সব হাদিস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হাকিম বলা হয়।
♦রিজাল :- হাদিসের রাবী সমষ্টিকে রিজাল বলে।যে শাস্ত্রে রাবীগণের জীবনী বর্ণনা করা হয়েছে তাকে আসমাউর রিজাল বলা হয়।
♦রিওয়ায়াত :- হাদীস বর্ণনা করাকে রিওয়ায়াত বলে।
কখনও কখনও মূল হাদীসকে রিওয়ায়াত বলা হয়।যেমন এই কথার সমর্থনে একটি রিওয়ায়াত (হাদিস)আছে।
♦সনদ :- হয়দীসের মূল কথাটুকু যে মূত্র পরম্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে সনদ বলা হয়। এতে হাদীস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক বর্ণিত থাকে।
♦মতন :- হাদীসের মূলকথা ও তার শব্দ সমষ্টিকে মতন বলে।
♦মারফূ :-যে হাদীসের সনদ(বর্ণনা পরম্পরা) রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে মারফূ হাদিস বলে।
♦মাওকূফ :-যে হাদিসের বর্ণনা সূত্র উর্ধ্ব দিকে সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে, অর্থাৎ যে সনদ সূত্রে কোন সাহাবীর কথা বা কাজ অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে তাকে মাওকূফ হাদীস বলে।এর অপর নাম আসার।
♦মাকতূ :- যে হাদিসের সনদ কোন তাবিঈ পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাকে মাকতূ হাদীস বলে।
♦মুত্তাসিল :- যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ণরূপে রক্ষিত আছে, কোন স্তরেই কোন রাবীর নাম বাদ পড়েনি তাকে মুত্তাসিল বলে।
♦মুনকাতি :-যে হাদিসের সনদের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়নি, মাঝখানে কোন এক স্তরে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে, তাকে মুনকাতি' হাদিস বলে, আর এই বাদ পড়াকে ইনকিতা বলা হয়।
♦মুরসাল :- যে হাদিসের সনদের ইনকিতা শেষের দিকে হয়েছে, অথাৎ সাহাবীর নাম বাদ পড়েছে এবং তাবিঈ সরাসরি রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহও ওয়া সাল্লাম) এর উল্লেখ করে হাদিস বর্ণনা করেছেন তাকে মুরসাল হাদীস বলা হয়।
♦মুতাবি ও শাহিদ :- কোন রাবীর হাদীসের অনুরুপ যদি অপর কোন রাবীর কোন হাদিস পাওয়া যায় তাহলে দ্বিতীয় রাবীর হাদীসকে প্রথম রাবীর হাদীসের
মুতাবি বলা হয়। যদি উভয় হাদিসের মূল রাবী অর্থাৎ সাহাবী একই ব্যক্তি হন।আর এইরূপ হওয়াকে মুতাবা'আত বলে। যদি মূল রাবী একই ব্যক্তি না হন তাহলে দ্বিতীয় ব্যাক্তির হাদীকে শাহাদত বলে।মুতাবা'আত ও শাহাদাত দ্বারা প্রথম হাদীসটির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
♦মু'আল্লাক :- সনদের ইনকিতা প্রথম দিকে হলে, অথাৎ সাহাবীর পর এক বা এজাধিক রাবীর নাম বাদ
পড়লে তাকে মু'আল্লাক হাদীস বলে।
♦মারুপ ও মুনকার :- কোন দুর্বল রাবীর বর্ণিত হাদীস অপর কোন মাকবূল (গ্রহণযোগ্য) রাবীর বর্ণিত হাদীসের বিরোধী হলে তাকে মুনকার বলা হয় এবং মাকবূল রাবীর হাদীসকে মারুপ বলা হয়। মুনকার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।
♦সহীহ :- যে মুত্তাসিল হাদিসে সনদে উল্লেখিত প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ আদালত ও যাবতীয়গুণ সম্পন্ন এবং হাদিসটি যাবতীয় দোষত্রুটি হতে মুক্ত তাকে সহীহ হাদীস বলে।
♦হাসান :- যে হাদীসের কোন রাবীর যাবতীয় গুণে পরিপূর্ণতার অভাব রয়েছে তাকে হাসান হাদীস বলা হয়।
♦যঈফ :- যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুণ সম্পন্ন নন তাকে যঈফ হাদীস বলে।রাবীর ব্যক্তিগত দুর্বলতা কারণেই দুর্বল বলা হয়, অন্যথায় নবী করীম( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন কথাই যঈফ নয়।
♦মাওযূ :- যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামে মিথ্য কথা রটনা করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে,তার বর্ণিত হাদীসকে মাওযূ হাদীস বলে।এরুপ ব্যক্তির বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।
♦মাতরুক :- যে হাদীসের রাবী হাদীসের ক্ষেত্রে নয় বরং সাধারণ কাজ কর্মে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে বলে খ্যাত, তার বর্ণিত হাদীসকে মাতরুক হাদীস বলা হয়। এরুপ ব্যক্তির বর্ণিত হাদীসও পরিত্যাজ্য।
♦মুবহাম :- যে হাদীসের রাবীর উত্তমরুপে পরিচয় পাওয়া যায়নি, যার ভিত্তিতে তার দোষগুণ বিচার করা যেতে পারে।এ রুপ রাবীর বর্ণিত হাদীসকে মুবহাম হাদিস বলে। এই ব্যক্তি সাহাবী না হলে তার হাদিসও গ্রহণযোগ্য নয়।
♦মুতাওয়াতির :- যে সহীহ হাদীস প্রত্যেক যুগে এত অধিক লোক রিওয়ায়াত করেছেন যাদের পক্ষে মিথ্যার জন্য দলবদ্ধ হওয়া সাধারণতঃ অসম্ভব তাকে মুতাওয়াতির হাদিস বলে। এ ধরনের হাদীস দ্বারা নিশ্চিত জ্ঞান লাভ হয়।
♦খাবরে ওয়াহিদ :- প্রত্যেক যুগে এক,দুই অথবা তিনজন রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীসকে খাবরে ওয়াহিদ বা আখবারুল আহাদ বলা হয়।
♦মাশহুর :- যে সহীহ হাদীস প্রত্যেক যুগে অন্ততঃপক্ষে
তিনজন রাবী বর্ণনা করেছেন তাকে মাশহুর হাদীস বলে।
♦আযীয :- যে সহীহ হাদীস প্রত্যেক যুগে অন্তত দুইজন রাবী বর্ণনা করেছেন তাকে আযীয বলে।
♦গারীব :- যে সহীহ হাদীস কোন যুগে একজন মাত্র রাবী বর্ণনা করেছেন তাকে গারীব হাদীস বলে।
♦ হাদীস কুদুসী :- যে হাদীসের মূলকথা সরাসরি আল্লাহর নিকট থেকে প্রপ্ত অথবা আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করে।যেমন আল্লাহ তার নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ইলহাম কিংবা স্নগ্নযোগে অথবা জিবরাঈল(আঃ) এর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন, মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তা নিজ ভাষায় বর্ণনা করেছেন।
♦মুত্তাফাক আলাইহি :- যে হাদীস একই সাহাবী থেকে ইমাম বুখারী(রহঃ) ও ইমাম মুসলিম(রহঃ) উভয়ে গ্রহণ করেছেন, তাকে মুত্তাফাক আলাইহি হাদীস বলে।
♦ আদালত:- যে সুদৃঢ শক্তি মানুষকে তাকওয়া ও শিষ্টাচার অবলম্বনে এবং মিথ্যা আচরণ থেকে বিরত থাকলে উদ্ধুদ্ধ করে তাকে আদালত বলে।এখানে তাকওয়া বকতে অশোভনীয় ও অভদ্রোচিত কাজ থেকে বিরত থাকা, যেমন হাট-বাজারে বা প্রকাশ্যে পানাহার করা বা রাস্তা -ঘাটে প্রসাব -পায়খানা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাও বুঝায়।
♦যাবত :- যে স্মৃতিশক্তি দ্বারা মানুষ শ্রুত বা লিখিত বিষয়কে বিস্মৃতি বা বিনাশ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয় এবং যখন ইচ্ছা তা সঠিকভাবে স্মরণ করতে পারে তাকে যাবত বলে।
♦ছিকাহ:- যে রাবীর মধ্যে আদালত ও যাবত উভয় গুণ পূর্ণভাবে বিদ্যমান,তাকে ছিকাহ ছাবিত বা ছাবাত বলে।