জীবন ঘনিষ্ট কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-পর্ব ১০
▬▬▬●●●▬▬▬
❒ প্রশ্ন: ‘সুদে টাকা লাগায় বা সুদ লেনদেন করে এমন কাউকে যাকাতের টাকা দিলে যাকাত আদায় হবে না।’ এ কথা কি ঠিক?
❖ উত্তর: যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে দ্বীনদার, সৎ ও নামাযি গরিব-অসহায় মানুষকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিৎ।
যে সুদ লেনদেন করে এমন লোককে যাকাত দেয়া ঠিক নয়। তবে যদি যাকাত দেয়ার মাধ্যমে তাকে সুদ থেকে ফিরানো বা দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তাকে যাকাত দেয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
❒ প্রশ্ন: কোন মুসলিম কি কোন হিন্দু বা অন্য ধর্মের আইনজীবী দ্বারা মামলা মুকদ্দমা চালাতে পারে?
❖ উত্তর: ন্যায় বিচার পাওয়ার স্বার্থে যদি কোন অমুসলিম আইনজীবীকে আইন ও মামলা পরিচালনায় অধিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও পারঙ্গম মনে হয় তাহলে তার মাধ্যমে মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনা করা দূষণীয় নয় যদি সে এ ক্ষেত্রে শরীয়া বিরোধী কোন কাজ না করে। যেমন মিথ্যার আশ্রয়, মিথ্যা সাক্ষ্য, ডকুমেন্ট জাল করা, ঘুস প্রদান ইত্যাদি।
এ সকল অন্যায় কার্যক্রম ও অসৎ উপায় অবলম্বন করা সর্বাবস্থায় সকলের জন্য গর্হিত ও নিষিদ্ধ- চাই সে মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম হোক।
❒ প্রশ্ন: কোন ব্যক্তি যদি শুধু রমযান মাসে নামায পড়ে ও রোজা রাখে। তার ব্যাপারে শরিয়তের হুকুম কি?
❖ উত্তর: রমাযান মাসে রোযা ফরয। কিন্তু নামায তো কেবল রমাযানে ফরজ নয় বরং সারা বছর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ। ইচ্ছাকৃত ভাবে এক ওয়াক্ত নামায পরিত্যাগ করা কুফুরী পর্যায়ের গুনাহ।
অত:এব কেউ যদি ধারাবাহিকভাবে নামায পরিত্যাগ করতে থাকে তাহলে সম্ভাবনা রয়েছে যে, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে পূর্ণ কাফের হয়ে যাবে।
সুতরাং কেউ যদি কেবল রমাযান মাসে নামায-রোযা করে, দ্বীন মানে কিন্তু অন্য মাসে সেগুলো পরোয়া না করে তাহলে তাকে দ্বীন সম্পর্কে বুঝাতে হবে, দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করতে হবে, দাওয়াত দিতে হবে এবং সেই সাথে তার হেদায়েতের জন্য দুআ করতে হবে। আল্লাহ হেদায়েত দিলে সে রমাযানের বাইরেও নামাযী এবং দ্বীনদারে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
❒ প্রশ্ন: স্বামীর টাকায় কিছু কিনে তা মা-বাবার নামে চালিয়ে দেওয়া কি জায়েজ?
❖ উত্তর: এটি হারাম। কেননা তা এক দিকে মিথ্যা অন্য দিকে স্বামীর অনুমতি ছাড়া সম্পদ ব্যয়। ইসলামের দৃষ্টিতে উভয়টি অন্যায়। ইসলাম স্বামী বা স্ত্রী কাউকে একে অপরের অর্থ-সম্পদ খরচ বা দান করার অনুমতি দেয় না তার সম্মতি ব্যতিরেকে।
অবশ্য ছোটখাটো জিনিস স্বামীর অনুমতি ছাড়া দান করলে যদি তার স্বভাব ও আচরণ থেকে বুঝা যায় যে, সে এতে রাগ করে না বা টুকিটাকি বিষয়ে তার সম্মতি আছে তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই।
❒ প্রশ্ন: একজন আইনজীবী বললেন যে, “স্ত্রী যদি স্বামীকে না বলে স্বামীর পকেট থেকে বা ঘর থেকে সব টাকা পয়সা নিয়ে নেয় বা সরিয়ে ফেলে তবু তাকে ‘চুরি’ বলা যাবে না।” এ কথাটা কি শরিয়ত সমর্থন করে?
❖ উত্তর: অবশ্যই তা শরিয়ত সমর্থন করে না।
স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর জন্য তার অর্থ-সম্পদ কাউকে দান করা বা খরচ করা বৈধ নয়। তবে যদি স্বামীর পক্ষ থেকে অনুমতি থাকে তাতে সমস্যা নেই। ঠিক তদ্রূপ, যদি পরিমাণে তা সামান্য হয় এবং তা দান করলে বা খরচ করলে স্বামী তাতে সাধারণত: মন খারাপ করে না অথবা সামাজিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য তাহলে তাতেও সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ।
তবে স্বামী যদি নিষেধ করে বা রাগ করে বা তার পরিমাণ বেশি হয় তাহলে অবশ্যই তার অনুমতি নিতে হবে।
এই নিয়ম মেনে চললে তাতে দাম্পত্য জীবন সুন্দর থাকবে ইনশাআল্লাহ। অন্যথায় ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে।
ইসলামের বিধি বিধানের সাথে বাংলাদেশের অনেক আইন বা বিধি বিধানের মিল নেই।
❒ প্রশ্ন: কেউ সলাতে দাঁড়িয়ে সূরা-কিরাআত পাঠ করে পরে কিন্তু চেয়ারে বসে রুকু ও সেজদা করে। এতে কি তার সলাতে শুদ্ধ হবে?
❖উত্তর: অসুস্থতা বা শারীরিক সমস্যার কারণে এমনটি করলে সালাত শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।
➤ বি:দ্র: ফেসবুক ও হোয়াটসএপের মাধ্যমে অনেকে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন করলে তখন অতি সংক্ষেপে সেগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়। সেখানে দলীল-প্রমাণ, ওলামাদের মতামত ইত্যাদি উল্লেখ করা হয় না। এই সিরিজের প্রশ্নোত্তরগুলো মূলত: সে সব প্রশ্নোত্তরের সংকলন। এগুলো সর্ব সাধারণের উপকারের উদ্দেশ্যে শেয়ার করা হল।
তাই কারো যদি বিশেষ কোন বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয় বা দলিল প্রয়োজন হয় তাহলে দয়া করে উত্তর দাতা শাইখের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হল।
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তররের লিংকঃ
▬▬▬●●●▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব