হুজুর কুরআন হাদিসের ভুল ব্যাখা বা কিচ্ছা কাহিনী বললে তাকে গোপনে শুধরে দিতে হয় নাকি প্রকাশ্যে শুধরে দিতে হয়।

আন্তর্জাতিক প্রশ্নের আন্তর্জাতিক উত্তর ! 

কিছু ভাইদের সাধারণ প্রশ্ন- “ অমুক মাওলানা মাহফিলে পবিত্র কুরআন- হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন !” তাঁর ভুলটা তাঁকে ফোন করে বা তাঁর সংগে যোগাযোগ করে বলা যায়না ? “ ফেইসবুকে তাঁর সমালোচনা করেন কেন ?” 

জবাব:
প্রথমেই বলে রাখি যে, কারাবন্দী সকল শ্রেণীর আলেমদের মুক্তি কামনা করি এবং একইসঙ্গে তাঁদের হেদায়াত কামনা করি । কারণ বন্দী আলেম- উলামাদের অনেক বক্তব্য প্রশ্নবিদ্ধ ! 

এবার আসছি প্রশ্নের জবাবে :
একজন হুজুর/ বক্তা বা মাওলানা লক্ষ লক্ষ জনতার বিশাল মাহফিলে পবিত্র কুরআন- হাদিসের চরম ভুল ব্যাখ্যা কিংবা কূফরী বক্তব্য অথবা বানোয়াট কাহিনী শুনিয়ে যাবেন ! আর আমরা তাঁকে প্রাইভেট ও ব্যক্তিগতভাবে ফোন বা তাঁর সংগে যোগাযোগ করে তাঁর ভুলটা ধরানোর চেষ্টা করবো! Fantastic! এ ধরণের মনগড়া ও বানোয়াট যুক্তি প্রদর্শনের জন্য এক সমুদ্র আফসোস উপহার দিচ্ছি!

মসজিদের ইমাম সাহেব ভুলবশত: জোহরের ৪ রাকাতে দাঁড়িয়ে গেলেন ! আর আপনি জেনে শুনে পেছন থেকে তাঁকে  লোকমা দিলেন না ইমাম সাহেবের মান- সম্মান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকায় !এ ফাঁকে ইমাম সাহেব ৫/৬ রাকাত শেষ করলেন অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় !আর আপনি নামাজ শেষে ইমাম সাহেবের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে তাঁর ভুলটা ধরিয়ে দিলেন ! এই তো ?

এ নামাজ তো বাতিল । কারণ পেছনে থাকা মুসল্লী জেনে শুনে লোকমা দেননি ! এই না দেয়ার কারণে তিনি নিজেও গুনাহগার হবেন এবং সকলের নামাজ বাতিল !  কমেডিয়ান হুজুর লক্ষ জনতার সামনে বললেন “ অমুক মুফতি সাহেবকে সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহপাক ১৫০০ বছর চিন্তা করেছিলেন ! “ এ জায়গায় হুজুরের ঈমান তো নেই ! তিনি তো দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে গেছেন ! যে মুফতিকে নিয়ে তিনি কূফরী করলেন, সেই মুফতি এক বয়ানে বললেন “ নামাজ না পড়লে নাকি জাহান্নামে যেতে হবে “ এই মর্মে কোন আয়াত পবিত্র কুরআনে নেই !” 

এ ধরণের পথভ্রষ্ট হুজুরদেরকে যদি ফোন করে তাঁর ভুলের কথা ধরিয়ে দিই, লক্ষ জনতার কি হবে ? তাঁরা তো তাঁর কথা বিশ্বাস করেছিলো মনেপ্রাণে !!! এই লক্ষ জনতার কানে হুজুরের কূফরী ও পথভ্রষ্টতার সংবাদ কে পৌঁছাবে ? কিভাবে পৌঁছাবে ? 
এই ধরণের হুজুর কি কখনো তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছেন মর্মে মাহফিলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ? আল্লাহর কাছে তাওবা করেছিলেন ? লক্ষ জনতার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন ? 
এ সকল পথভ্রষ্ট হুজুরদের বয়ান দেখে থাকি ফেইসবুকে । আমি তাঁর জবাবও দেবো ফেইসবুকে । এটাই তো যৌক্তিক । তাঁর কাছে ফোন করবো কি জন্যে ? 
আমরা বক্তা ও বক্তার বক্তব্য বিচার করে থাকি পবিত্র কুরআন ও হাদিসের মানদণ্ডে । ফেইসবুকে প্রশ্ন , ফেইসবুকেই জবাব । 

 গোপন গুনাহের জন্য গোপনে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাইবেন এবং প্রকাশ্যে গুনাহের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে । মনে রাখবেন যে, পরিবারের আভ্যন্তরীণ বিষয় পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে । দ্বীন/ ধর্ম নিয়ে পথভ্রষ্টতা ব্যক্তিগতভাবে সীমাবদ্ধ নয় । এটা গোটা মুসলিম জাতির সাথেই সম্পৃক্ত । 
 আল্লাহপাক বলেন “ যে আমাকে গোপনে স্মরণ করে, আমি তাকে গোপনে স্মরণ করি । পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আমাকে জামায়াতের মধ্যে স্মরণ করে, আমি তাকে তারচে’ বড় জামায়াত সহকারে স্মরণ করি । অর্থাৎ ফিরিশ্তাদের নিয়ে তাকে স্মরণ করি । “

ছহীহুল বোখারি ৭৪০৫
ছহীহ মুসলিম ২৬৭৫

ব্যক্তিগত ভুল আর বিশাল জনতার সামনে ভুল দুটোর মান এক নয় । লক্ষ জনতার সাথে প্রতারণা করা হলে মিডিয়ার মাধ্যমে লক্ষ জনতার কানে পৌঁছিয়ে দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব । সুতরাং মনগড়া ও অজ্ঞতাসূলভ প্রশ্ন করা থেকে বিরত হোন এবং আজই শিক্ষা গ্রহণ করুন । নচেৎ ইমাম সাহেবের ৬ রাকাত জোহর সালাত পড়ানোর মতো হবে বৈকি !
আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিক ইলম বুঝার তওফিক দান করুক । আমিন ।

MQM Saifullah Mehruzzaman

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post

Contact Form