জন্মদাতা পিতা ছাড়াও ব্যক্তিগত জীবনে কিংবা রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে সম্মানার্থে কাউকে বাবা সম্মোধন করা জায়েজ । ইসলাম এ বিষয়ে উদারতার পরিচয় দিয়েছে । যেমন শ্বশুরকে বাবা সন্মোধন করা , কারো বাচ্চাকে এভাবে ডাকা “ বাবা এদিকে আসো “ , একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রকে বাবা বলে স্নেহ করা ইত্যাদি সম্পূর্ণ জায়েজ ।
*** কোন কোন মানুষ একটি দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রাখেন এবং রেখেছেন বলে ইতিহাস প্রমাণ করে । যেমন সংযুক্ত আরব আমীরাতের স্হপতি শায়খ যায়েদ রহ: । সৌদিয়ার প্রতিষ্ঠাতা শায়খ সৌদ রহ: । পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা খুব সম্ভবত কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁকে দেশটি জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন মনে হয় । অনুরুপভাবে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের অবদান সবচে’ বেশী বলে স্বীকৃত । এ ধরণের কিছু ঐতিহাসিক ব্যক্তি জাতির কাণ্ডারীর ভূমিকা পালন করে থাকেন । তাঁরা সারাবিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন । এ সুবাদে সমগ্র বিশ্বের সংগে একটি জাতিকে পরিচয় এবং একটি স্বাধীন দেশকে তুলে ধরার সঙ্গত কারণে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক তাঁকে “ জাতির পিতা “ বলা যেতে পারে । তাঁকে জাতির পিতা সম্মোধন করা হলে গুনাহ হবেনা । তবে দু:খজনক হলেও সত্য যে, শেখ সাহেবকে বিতর্ক ও সমালোচনার উর্দ্ধে রাখার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন । কেননা শেখ সাহেবকে জাতির পিতা হিসেবে সম্মান দেয়ার জন্য জনগণের ভালোবাসা ও আন্তরিকতা জ্বয় করতে হবে । এ জায়গায় আওয়ামী লীগ ফেল ! বরং জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করার কারণে পাবলিক তা’ আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেনি । আমার কাছে তাই মনে হয়েছে ।
*** আরবী ভাষায় পিতা ‘র জন্য দুটো শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে । اب এবং والد
এ দুটো শব্দের প্রয়োগ সম্পূর্ণ ভিন্ন ।
*** আবুন اب শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । অর্থাৎ জন্মদাতা পিতা এবং কারো প্রতি স্নেহ বা সম্মান দেখানোর জন্য পিতা উভয় জায়গায় ব্যবহার হয় । যেমন সাইয়্যিদুনা আদম আ:’ হলেন ابو البشر অর্থাৎ তিনি হলেন মানবজাতির পিতা । আল্লাহপাক সাইয়্যিদুনা ইব্রাহিম আ:কে তাঁর পরবর্তী মুসলিম জাতির পিতা বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন
ملة أبيكم ابراهيم
সূরা আল হজ্ব ৭৮
তাঁকে ابو الأنبياء বলা হয় । অর্থাৎ তিনি তাঁর পরবর্তী সকল নবীদের জন্য পিতা সদৃশ ।
*** পক্ষান্তরে والد শব্দটি একমাত্র জন্মদাতা পিতার জন্য খাচ ও সুনির্দিষ্ট । অন্য কোন ব্যক্তি যেমন শ্বশুর বা জাতির পিতার ক্ষেত্রে এ শব্দটি ব্যবহার করা জায়েজ নয় । পবিত্র কুরআনে এ শব্দটি সর্বত্রই জন্মদাতা পিতার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে । যেমন
و قضي ربك ان لا تعبدوا إلا إياه و بالوالدين احسنا
সূরা আল ইসরা ২৩
و وصينا الانسان بوالديه حملته امه وهنا علي و وهن
সূরা লোকমান ১৪
*** সুতরাং আরবী ভাষায় পিতা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন ।
*** কোন দেশের স্হপতি অমুসলিম হলেও জাতির পিতা পদবী লাভ করতে পারেন । এটাও জায়েজ । কেননা আমাদের চৌদ্দ পুরুষ পূর্বে আমাদের পিতারা অমুসলিম ছিলেন । আবার সর্ব প্রথম মানুষটি নবী আ: ছিলেন । অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা আদম আ: । তাঁর জন্য اب শব্দ ব্যবহার হবে । والد শব্দ ব্যবহার হবেনা । কারণ তিনি আমাদের জন্য জন্মদাতা পিতা নন ।
MQM Saifullah Mehruzzaman