মাহে রমজান ২০২২. ১ম পর্ব । বিষয়ঃ তারাবিহ’র নামাজ •••
*** তারাবিহ ( تراويح ) শব্দটি বহু বচন । একবচন হলো ترويحة , অর্থ বিশ্রাম নেয়া । সালাফগণ লম্বা লম্বা তেলাওয়াত করার কারণে ২ রাকাত বা ৪ রাকাত পরপর একটু বিশ্রাম নিতেন । এ জায়গা থেকেই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে “ তারাবিহ” নামে । এ শব্দটি মহানবী সাঃ’র সময়ে কিংবা কোন হাদিসে নেই । হাদিসে বলা হয়েছে ….
من قام رمضان إيمانا و احتسابًا غفر له ما تقدم من ذنبه
ছহীহুল বোখারি ৩৭
ছহীহ মুসলিম ৭৫৯
এখানে قام বা قيام মানে তারাবিহ’র সালাত উদ্দেশ্য । এ নামাজটিকে হাদিসের ভাষায় ক্বিয়ামুল লাইল ( قيام الليل ) বা বিতির বলা হয় ।
*** তারাবিহ’র নামাজ সুন্নতে মোয়াক্কাদা । এ নামাজ পারতপক্ষে ত্যাগ করা উচিত নয় । না পড়লে গুনাহ হবেনা তবে ছওয়াব লাভ করা থেকে বণ্চিত হবে ।
উম্মুল মুসলিমীন সাইয়্যিদাহ আয়েশা রাঃ বলেন “ মহানবী সাঃ মাহে রমজানে কিংবা অন্য কোন মাসে ১১ ( ৮+৩) রাকাতের অধিক নামাজ পড়েননি ।
ছহীহুল বোখারি ৩৫৬৯
ছহীহ মুসলিম ৭৩৮
এ হাদিসে মা’ আয়েশা রাঃ আরো বলেন যে, মহানবী সাঃ’র নামাজের লম্বা ও সৌন্দর্যের বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করোনা । অর্থাৎ নজিরবীহিন সুন্দর ছিলো । সুতরাং দ্রুত নামাজ পড়া দ্বীনের সাথে তামাশা করার নামান্তর !
“ সাইয়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইব্নে আব্বাস রাঃ’র এক বর্ণনায় ১৩ রাকাত পর্যন্ত পাওয়া যায় ।
ছহীহুল বোখারি ১১৩৮
ছহীহ মুসলিম ৭৬৪
*** সাইয়্যিদুনা ওমর রাঃ’র সময়ে ২০ রাকাত তারাবিহ’র সূচনা সংক্রান্ত হাদিসটি মুরসাল । কেউ যদি সেটার উপরও আমল করতে চায়, সমস্যা নেই । যেহেতু বিষয়টি ব্যাপক । যতো রাকাত ইচ্ছে হয়, পড়ুন । কোন বাঁধা নেই ।
*** কেউ যদি ২০/৩৬ বা আরো অধিক নামাজ আদায় করে, তাতে কোন সমস্যা নেই । বরং নিজের সাধ্যানুযায়ী ইবাদত করার কারণে ছওয়াব লাভ করবে ।
মক্কা / মদীনায় ২০ রাকাত পড়ার কারণ সুন্নত হিসেবে নয় বরং সকল শ্রেণীর মুসলিম সেখানে নামাজ আদায় করে থাকেন, বিশেষ মর্যাদার কারণে ইজতিহাদ অনুসরণ করতঃ ২০ রাকাত তারাবিহ , এমনকি শেষ রাতেও পড়া হয়ে থাকে । যেহেতু এটা সুন্নত নামাজ । সুতরাং বৃদ্ধি করা হলে অসুবিধা নেই । পক্ষান্তরে হাতে গুণা কয়েকটি মসজিদ ছাড়া সৌদিয়ারবের আর কোথাও ২০ রাকাত তারাবিহ নেই । সুতরাং মক্কা / মদীনায় “ হানাফী মাযহাব অনুসরণ করা হচ্ছে “ এমনটি মনে করে বোকামি করবেন না ।
*** ফরজ ও তারাবিহ’র নামাজে তেলাওয়াত / রুকু/ সিজদায় কোন পার্থক্য নেই । সুতরাং ধীরস্থিরতার সাথে তেলাওয়াত করা অত্যাবশ্যক । দ্রুত কুরআন পাঠ করা / দ্রুত রুকু/ সিজদা নামাজ বাতিল হওয়ার কারণ । সুতরাং যাঁরা 5 G স্পীডে তেলাওয়াত করতঃ অর্থের পরিবর্তন ঘটে গেলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে । এর দায়- দায়িত্ব নামাজের ইমামকে নিতে হবে । দ্রুত তেলাওয়াতকারী কোন হাফেজের পেছনে নামাজ পড়বেন না । নচেৎ আপনার নামাজ বাতিল হওয়ার জন্য আপনিও দায়ী হবেন !
*** তারাবিহ’র নামাজে খতমুল কুরআন নিয়ে মতভেদ লক্ষ্যণীয় ।
ইমাম আহমদ রহঃ বলেছেন “ কুরআন খতম করা মোস্তাহাব । সাইয়্যিদুনা ওসমান রাঃ’র সময় থেকে খতমুল কুরআন চলে আসছে ।
المغني لابن قدامة
“ ইমাম আবু হানিফা রহঃ বলেছেন সুন্নত । ইমাম মালেক রহঃ বলেছেন সুন্নত/ মোস্তাহাব কিছুই নয় । বস্তুতঃ মহানবী সাঃ’র সময়ে এটা ছিলোনা । এ বিষয়টি নির্ভর করছে মুসল্লীদের উপর । অধিকাংশ মুসল্লীরা যদি চায়, খতমুল কুরআন হওয়া বাণ্চণীয় ।
*** তারাবিহ’র নামাজে কুরআন দেখে দেখে পাঠ করা জায়েজ । এ বিষয়ে সকল ফক্বিহগণ ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন ।
সাইয়্যিদাহ আয়েশা রাঃ তাঁর ক্রীতদাসের পেছনে ( কুরআন দেখে দেখে পাঠ করা অবস্থায় ) ইক্তিদা করেছেন ।
المغني لابن قدامة ١/٣٣٥
المجموع للنووي ٤/٢٧
*** তারাবিহ’র নামাজের জন্য দরদাম করে টাকা নেয়া হাফেজদের জন্য মোটেই জায়েজ নয় । তবে মসজিদ কমিটি বা কোন ব্যক্তি বিশেষ হাদিয়া দিতে চাইলে তা’ গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হালাল । এ জায়গায় বরং ইমাম আবু হানিফা রহঃ’র ফতওয়া অত্যন্ত কঠোর । তিনি নামাজের ইমামতের জন্য টাকা গ্রহণ করা জায়েজ নেই বলেছেন ।
*** কম বয়সী হাফেজদের পেছনে তারাবিহ আদায় করা জায়েজ । তবে তাকে নামাজের বিধান সম্পর্কে ইলম থাকতে হবে । নতুবা সমস্যার সৃষ্টি হবে ।
*** এশার জামায়াত ছুটে যাওয়া ব্যক্তি তারাবিহ চলা অবস্থায় হাফেজ সাহেবের পেছনে এশার নামাজ আদায় করে নেবে । আলাদাভাবে এশার নামাজ পড়ার দরকার নেই ।
By Sheik MQM Saifullah Mehruzzaman
Tags
salat