আরাফার সিয়াম নিয়ে মতবিরোধের সঠিক সমাধান


সম্মানিত দ্বীনী ভাই সকল! আমরা যখন কোনো দ্বীনী মাসআলার আলোচনা করি, তখন আমাদের উদ্দেশ্য কখনো এটা হবে না যে, আমি অমুক তমুককে মানবো, বরং সঠিকটা মানবো। আর যদি আমি আপনি অতীতে বা বর্তমানে কোনো কিছুর প্রতি আমল করে থাকি এবং গবেষণায় সেটা ভুল প্রমাণিত হয়, তাহলে তা থেকে ফিরে আসাই আখেরাতের জন্য কল্যাণকর এবং একান্ত কাম্য, কারণ আমাদের উদ্দেশ্য আখেরাত। অত:পর একথা বলা জরূরী মনে করছি যে, মানুষকে তাঁর মর্যাদানুযায়ী কথা বলা এটা শরীয়ারই বিধান,তাই ধমকসুরে কিংবা আদেশ সুচক শব্দ পরিহার করবেন; নচৎে অভিজ্ঞতা ও দাওয়াতী নীতির আলোকে এটা প্রমাণিত তা সত্য হলেও লোক গ্রহণ করবে না।
আমাদের মূল বিষয়: #আরাফার রোযা হাজীগণের আরাফায় অবস্থান করার দিন রাখতে হবে না নিজ নিজ দেশের চন্দ্র তারিখ অনুযায়ী ৯বম যুল হিজ্জায় রাখতে হবে?

এ বিষয়ে কিছু লেখা ফতোয়া গতকাল থেকে বিশেষ করে পাচ্ছি এবং নিজেও কিছু গবেষণামূলক আরবী লেখা ইত্যাদি মুটামুটি পড়ে যা জানলাম তারই কিছুটা শেয়ার করতে চাচ্ছি আপনাদের সাথে।

১-গবেষকদের নিকট এটি একটি মাসআলা হাদেসা বা নতুন বিষয় যে কারণে প্রাচীন উলামাদের অভিমত আমাদের নির্দিষ্ট বিষয়ে একে বারে কম। কিন্তু এই ভাবে এই মাসআলার সম্বন্ধ প্রাচীন মাসআলা সাথে রয়েছে যে, মাসআলাটি ‘ইখতিলাফে মাত্বালি’ বা চন্দ্র উদয় স্থলের ভিন্নতার একটি অংশ আর যা প্রাচীন বিষয়।

২- আরাফার দিনে রোযা পালন করার যেমন মজবুত দলীল রয়েছে তেমনি নিজ নিজ তারিখ অনুযায়ী আরাফার রোযা পালন করার পক্ষেও মযবুত দলীল আছে।

৩-বর্তমান যুগের সালাফী উলামাগণ উভয় পক্ষে ফতোয়া দিয়েছেন।

৪- আরাফার দিন কোন দিন? এর নির্দিষ্ট করণে উলামাগণ দুই ভাগে বিভক্ত। ১ম- আরাফার দিন সেই দিন যে দিন হাজীগণ মক্কায় আরাফায় অবস্থান করেন। এমতের পক্ষে রয়েছেন সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদের ফতোয়া, শাইখ বিন বায, মাসরী দারুল ইফতা সহ অনেকে। ২য়: আরাফার দিন হচ্ছে নিজ নিজ দেশের তারিখ অনুযায়ী নবম যিল হিজ্জা যদিও মক্কায় আরাফা আগে হোক বা পরে। এর পক্ষে রয়েছেন ইউরোপীয় ইফতা বোর্ড, শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসায়মীন, ইবনু জিবরীন সহ অনেকে।

৫-আরাফায় দিনে রোযা রাখার মূল দলীলটি হচ্ছে, صيام يوم عرفة احتسب علي الله ان يكفر السنة التي قبله و السنة التي بعده
[স্বহীহ মুসলিম শরীফ ৬২৪]

এ হাদীসে সুস্পস্টভাবে রাসূল (সা:) এই রোযাকে আরাফার দিকে ইযাফত তথা সংযুক্ত করেছেন, যা সম্বন্ধপদ হওয়ার কারণে সেই দিনকেই বুঝায়।

=আরাফার দিনে রহমত অবতরণ ও অধিক হারে পাপীকে ক্ষমা করার দিন ও সময় হাজীগণের আরাফায় অবস্থান করার দিনকে বুঝায়।

=এখানে আর একটি বিষয় আছে, তা হল: জগতের মানুষেরা বর্তমানে যে কোনো পদ্ধতেই হোক না কেন এই আরাফা অবলোকন করছেন, তাই সেই দিনেই সিয়াম পাল করতে তাদের সংকোচ হয় না।

৬- নবম তারিখে রোযা রাখার মূল দলীলটি হচ্ছে, যিল হাজ্জ মাসের নবম তারিখকে আরাফা বলা হয় আরাফায় সমবেত হওয়ার দিনকে নয়। এ ছাড়াও এই দলীলটিও মূল অবস্থানে রয়েছে:
عن بعض أزواج النبي صلى الله عليه و سلم قالت كان رسول الله صلي الله عليه و سلم يصوم تسع ذي الحجة
অর্থাৎ নবী করীম (সা:) এর কিছু স্ত্রী হতে বর্ণিত নবী (সা:) যিল হাজ্জ মাসের নবম তারিখে রোযা রাখতেন। [আবু দাউদ নং ২৪৩৭ নাসাঈ ২৩৭২]

*তাদের আরো যুক্তি হচ্ছে, প্রযুক্তির পূর্বে লোকেরা নিজ নিজ চন্দ্র দর্শনের ভিত্তিতে নবম তারিখে সিয়াম পালন করতেন, তাই শরিয়াকে প্রযুক্তিমুখাপেক্ষী না করে সালাফমুখী করতে হবে।

=বি:দ্র: প্রযুক্তি মুখাপেক্ষী আলাদা বিষয় আর শরীয়া বুঝতে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া আলাদা বিষয়। আমরা উপরোক্ত উলামাদের সম্বন্ধে এ ধারণা পোষণ করতে পারি না যে, তারা শরীয়াকে প্রযুক্তিমুখী করে দিয়েছেন।

*তাদের আর একটি বড় মন্তব্য হচ্ছে, আরাফা একটি কাল বা সময়ের নাম স্থানের নাম নয়।

=বি:দ্র: তাহলে প্রশ্ন হয় বিভিন্ন ফুকাহায়ে কিরাম ও আইম্মাগণ যখন এই বাক্য বলেন যে, অকূফে আরাফা বা আরাফায় অবস্থান করা হজ্জের রুকন, তখন আপনাদের কাছে এর অর্থ কি হয়? আরাফার স্থানে অবস্থান করা না আরাফার সময়ে অবস্থান করা? উলামাগণ কোন্ অর্থে এই বাক্য ব্যবহার করতেন?

৭- জাহেরি নস্স বা দলীলের স্পষ্টতার দিকে দেখলে প্রথম মত অর্থাৎ আরাফার রোযা আরাফা দিবসেই হওয়া সঙ্গত মনে হয়। তাছাড়া বাস্তব চিত্রের সাথে খাপ খেয়ে যায়।

৮- ইসতিদলাল, আমলের ধারাবাহিকতা ও উম্মতের জন্য সহজতা লক্ষ্য করলে দ্বিতীয় মত অর্থাৎ নিজ নিজ চন্দ্র তারিখ অনুযায়ী ৯বম যিল হাজ্জে আরাফার রোযা পালন করা প্রাধান্য পাবার যোগ্য রাখে।

৯- বিষয়টি যেহেতু মুস্তাহাব বিষয় এবং উভয় পক্ষে যেহেতু সহীহ দলীল রয়েছে এমনকি স্বয়ং সালাফী উলামাগণেরও উভয় পক্ষে মত রয়েছে তাই আমি উভয় আমলকে জায়েয মনে করছি। আর কেউ কোনো একটি মতকে রাজেহ মনে করলে তাকে মন্দ মনে করি না এবং এনিয়ে দলাদলি মন্দ মনে করি। আল্লাহ যেন আমাকে ও আপনাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দেন, ও আমাদের সৎ আমলগুলি কবূল করেন তার জন্য দুআ করি। [ওয়াল্লাহু আ’লাম]

শাইখ Abdur Raquib মাদানি হাফিজাহুল্লাহ

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post

Contact Form