না কেঁদে পারলাম না। কি চমৎকার সাহাবিদের ভালবাসা।

মৃত্যুর মুখে অপূর্ব ভ্রাতৃত্ব !

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে নিজের জন্য যা ভালবাসে তার ভাইয়ের জন্য তা ভালবাসবে’ (বুখারী, ‘কিতাবুল ঈমান’)।

ইয়ারমুক যুদ্ধের বিশাল ময়দান। এক প্রান্তে ক্ষুদ্র মুসলিম সেনাদল আর অপর প্রান্তে রোমক দলের বিশাল সৈন্য বাহিনী। উভয় দলই ভয়াবহ এক যুদ্ধের মুখোমুখি দন্ডায়মান। যুদ্ধ শুরুর পূর্ব মুহূর্তে আবূ ওবাইদাহ, মু‘আয বিন জাবাল আমর ইবনুল আছ, আবূ সুফিয়ান, আবু হুরায়রাহ প্রমুখ ছাহাবী সৈন্যদের উদ্দেশ্যে হৃদয়গ্রাহী উপদেশ দেন। আবূ ওবাইদাহ উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন,

‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং পদযুগলকে স্থির করবেন। হে মুসলিম সেনাবাহিনী!
তোমরা ধৈর্যধারণ করো। কেননা ধৈর্য কুফরী থেকে বাঁচার, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের এবং লজ্জা নিবারণের উপায়। তোমরা তোমাদের যুদ্ধের সারি থেকে সরে দাঁড়াবে না। কাফেরদের দিকে এক ধাপও অগ্রসর হবে না এবং আগ বেড়ে তাদের সাথে যুদ্ধের সূচনা করবে না। শত্রুদের দিকে বর্শা তাক করে থাকবে এবং বর্ম দিয়ে আত্মরক্ষা করবে। তোমাদেরকে যুদ্ধের নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তোমরা মনে মনে আল্লাহর যিকির করতে থাকবে’।

যুদ্ধ শুরু হ’ল এবং প্রচন্ড আকার ধারণ করল। যুদ্ধের সময় হুযায়ফা (রাঃ) আহতদের মধ্যে তার চাচাতো ভাইকে খুঁজতে শুরু করলেন। তার সাথে ছিল সামান্য পানি। হুযায়ফার চাচাতো ভাইয়ের শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছিল। তার অবস্থা ছিল আশংকাজনক।

হুযায়ফা (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি পানি পান করবে? সে তার কথার কোন উত্তর দিতে সক্ষম না হয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত করল। আহত ব্যক্তি হুযায়ফার কাছ থেকে পানি পান করার জন্য হাতে নিতেই তার পাশে এক সৈন্যকে পানি পানি বলে চিৎকার করতে শুনল। পিপাসার্ত ঐ সৈনিকের বুকফাটা আর্তনাদ শুনে তার পূর্বে তাকে পানি পান করানোর জন্য হুযায়ফাকে ইঙ্গিত দিলেন। হুযায়ফা তার নিকট গিয়ে বললেন, আপনি কি পানি পান করতে চান? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

তিনি পান করার জন্য পাত্র উপরে তুলে ধরতেই পানির জন্য অন্য একজন সৈন্যের চিৎকার শুনতে পেলেন। তিনি পানি পান না করে হুযায়ফা (রাঃ)-কে বললেন, তার দিকে দ্রুত ছুটে যাও এবং সে পানি পান করার পর কিছু অবশিষ্ট থাকলে আমাকে দিয়ো। হুযায়ফা আহত সৈন্যটির কাছে গিয়ে দেখলেন, সে মারা গেছে।

অতঃপর দ্বিতীয় জনের কাছে এসে দেখলেন সেও মারা গেছে। অতঃপর চাচাতো ভাইয়ের কাছে ফিরে আসলে দেখেন তিনিও শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে জান্নাতবাসী হয়েছেন। পানির পাত্রটি তখনও হুযায়ফার হাতে। এতটুকু পানি। অথচ তা পান করার মত এখন আর কেউ বেঁচে নেই। যাদের পানির প্রয়োজন ছিল তারা আরেক জনের পানির পিপাসা মেটাবার জন্য এতই পাগলপরা ছিলেন যে, অবশেষে কেউ সে পানি পান করতে পারেননি। সবারই প্রাণ ছিল ওষ্ঠাগত। অসামান্য ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধের কারণে সবাই একে অপরের জন্য পানি ফিরিয়ে দিয়েছেন। কি অপূর্ব এ ভ্রাতৃত্ব! (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (কায়রোঃ ১৯৮৮), ৭/৮-১১ প্রভৃতি দ্রঃ)।

-মুহাম্মাদ মুছতফা মাহমূদ
মাদরাসা দারুল হাদীছ সালাফিয়াহ
পাঁচরুখী, আড়াই হাযার, নারায়ণগঞ্জ।

(গল্পের মাধ্যমে জ্ঞান)
উৎস: মাসিক আত-তাহরীক

http://sotterdikeahobban.com/2018/05/03/12165/

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post

Contact Form