বাংলাদেশের আলেমরা মক্কা মদীনার আলেমদের বিরোধিতা করেন কেন?

দেশীয় আলেমগণ ইসলামের আদি নিবাস মক্কা মদীনার শায়েখ দের ইলম বিরোধী কেন???

খুব ছোটবেলা থেকেই আমাদের দেশের কিছু আলেম ওলামাদের মুখে চরম সৌদি বিরোধী প্রচারনা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি এবং এখোনো শুনছি। যেখানে মানবতার শ্রেষ্ঠ মানব রাসুল (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম ) জন্মেছেন এবং আজো মদিনার মাটিতে শুয়ে আছেন। যেখানে রাসুল (সাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লাম ) এর অসংখ্য সাহাবী, তাবেইন, তাবে-তাবেইন শুয়ে আছেন। যেখান থেকে ইসলামের জন্ম, যেটি মুসলিমদের পূন্যভুমি, যেখানে কখনো দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবেনা। সেই মক্কা-মদীনা এবং তার জনগোষ্ঠির প্রতি কেন এতটা ‘‘ঘৃণা’’?

আমাদের আলেম ওলামাদের বড় একটা অংশের সাথে মক্কা-মদীনার আলেম ওলামাদের বেশকিছু আকিদ্বাগত পার্থক্য আছে। আর একারনেই আমাদের আলেমগন সৌদীর আলেমদের বিরোধিতা করে থাকেন।।

অথচ, মদীনা হচ্ছে "দারুল ঈমান" বা "ঈমানের গৃহ"। তাইতো এখান থেকেই ঈমানের আলো সারা বিশ্বে বিচ্ছুরিত হয়েছিল। পরিশেষে মানুষ যখন ঈমান হতে বিচ্যুত হতে থাকবে, তখন ঈমান তার গৃহে তথা মদীনার দিকে ফিরে আসবে, যেভাবে সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )বলেন:

«إِنَّ الإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْمَدِينَةِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا».

 “ঈমান মদীনার দিকে ফিরে আসবে, যেভাবে সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে’’। [সহীহ বুখারী – ১৮৭৬ ও মুসলিম – ৩৭২]

একজন মুসলিমের জীবনে আকিদ্বার চেয়ে অন্য কোন বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আকিদ্বা শুদ্ধ হলে ঈমান শুদ্ধ, তা না হলে ঈমান থাকবেনা। আকিদ্বা সঠিক না হলে আমল কোন কাজে আসবেনা।।

এজন্য রাসুল (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর নবুয়তী জীবনের দীর্ঘ তের বছর মানুষকে শুধু তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছিলেন, এবং মাক্কী জীবনে পবিত্র কোরআনে যে সুরা গুলো নাজিল হয়েছিল তার বেশীর ভাগই তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদ বিষয়ে। এবং তারপর বিভিন্ন আমল ইবাদত এসেছে। রাসুল (সাল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লাম ) এর মেরাজের পরই নামাজ ফরজ হয়েছে, তার আগে ফরজ ছিলো না। (মেরাজ হয়েছিল নবুয়তি জীবনের ১৩ তম বৎসরে) অর্থাৎ ইবাদত ফরজ হয়েছে অনেক পরে। আগে তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।।

আর আমরা ইবাদতের ছোট-খাটো মাসয়ালা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-ফ্যাসাদ, মারা-মারি, দলা-দলি করি; এমনকি কিভাবে ভিন্ন মতালম্বীদের ঘায়েল করা যায় তা নিয়ে সারাক্ষন ব্যস্ত থাকি, আর আকিদ্বার বেলায় ঠন ঠন।।

আবার আমাদের দেশের যে সকল আলেমগন মক্কা-মদীনার আলেমদের অনুসরন করে অথবা যে সকল আলেমগন মদিনা ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশুনা করে আমাদের দেশে দ্বীণ প্রচার করছে তাদেরকে ওয়াহাবী, লা-মাযহাবি, আহলে খবিশ, ইহুদী খ্রীস্টানদের দালাল, এমনকি কাফের আখ্যা দিতেও এরা কার্পন্য বোধ করেনা...!!!

বাংলাদেশ সহ এই উপমহাদেশে বিকৃত ইসলাম কিভাবে আসলো এর কারণ খুঁজে পেতে ইতিহাস দেখা যায়। যেখানে আমরা দেখতে পাই:

বিশুদ্ধ ইসলাম মক্কা মদীনা হতে যাত্রা করে
➳ সিরিয়া গিয়ে রুগাক্রান্ত হয়ে
➳ ইরাকে হক্ব-বেহক্ব মিশিয়ে ফিকহী গুড়ামীর শিকার হয়ে,পীর মূরীদীর শির্ক-বিদাত মিশ্রিত হয়ে,
➳ ইরানে শিয়াদের নুংরা আকিদায় স্নান করে,
শিয়াদের ফার্সি ভাষার কিতাব নিয়ে,
কর্তিত, মিশ্রিত, ক্ষত-বিক্ষত হয়ে,
➳ ভারতে তথা ইংরেজ গভর্নর ড.ম্যাকলির মাদ্রাসা সিলেবাসে বিদাত-শির্ক মিশে আজকের দেশীয় হালুয়া মার্কা ভেষজ ইসলাম আমরা পেয়েছি...!!!

তাহলে আমরা বাংলাদেশীরা কেমন ইসলাম পালন করছি???আল্লাহ বলেন, অর্থ :

"পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামে প্রবেশ কর"। (সূরা বাকারা, আয়াত ২০৮)।।

প্রযুক্তির উন্নতিতে ষ্পষ্ট হল আমাদের বর্তমান ক্ষত-বিক্ষত ইসলাম, মদীনার ইসলাম হতে অনেক ভিন্নতা পেয়েছে? বলুন, আল্লাহর সন্তুু্টির জন্য এখনও কি আমরা মদীনার বিশুদ্ধ ইসলামে (কুরআন-সুন্নাহ) সহীহ-আকিদ্বায় ফিরে যাবো না? 

আমাদের ভাববার সময় এসেছে! 
আমরা কি আমাদের পীর-ফকির-দরবেশ-সুফিদের বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনী এবং শিরক-বিদাআত মিশ্রিত ইবাদত-বন্দেগী নিয়ে থাকবো, নাকি মক্কা-মদীনার আলেমদের দলীল নির্ভর আদর্শের অনুসরণ করবো...???
তবে হাঁ, সিদ্ধান্ত যার দায়ভারও তার ! আল্লাহই তাওফিকদাতা।
 
লেখক শায়েখ আজমল হোসাইন মাদানী

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post

Contact Form